সপুষ্পক উদ্ভিদের জননাঙ্গ হল ফুল। যৌন জননে সহায়ক ফুলের অঙ্গ গুলি হল- 1) গর্ভকেশর চক্র- গর্ভকেশর চক্রের উপাদান গুলি হল- ক) গর্ভমুন্ড, খ) গর্ভদন্ড, গ) গর্ভাশয় বা ডিম্বাশয়। এবং 2) পুং কেশর চক্র- ক) পরাগধানী ও খ) পুংদন্ড। যে পদ্ধতিতে একটি ফুলের পরাগরেনু ফুলের গর্ভমুন্ডে পড়ে তাকে বলে পরাগযোগ বা পরাগমিলন। এর জন্য কিছু বাহকের প্রয়োজন হয়। যেমন-
জল- পাতাঝাঁঝি, পাতাশ্যাওলা
পতঙ্গ- আম, ডালিম ইত্যাদি
পক্ষী- শিমূল, পলাশ ইত্যাদি
বায়ু- ধান, ভুট্টা, গম ইত্যাদি
এখন পরাগযোগ আবার দুরকম ভাবে হয়।
1) স্বপরাগযোগ: যখন পরাগরেনু একই ফুলের (অটোগ্যামি) অথবা একই গাছের অন্য কোনো ফুলের (গিটেনোগ্যামি) গর্ভমুন্ডে পড়ে তখন তাকে বলে স্বপরাগযোগ।
2) ইতর পরাগযোগ: যখন পরারেনু একই প্রজাতির অন্য কোনো গাছের অন্য কোনো ফুলের গর্ভমুন্ডে পড়ে তখন তাকে ইতর পরাগযোগ বলে।
এবার আসা যাক নিষেক প্রক্রিয়ায়। আসলে সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক দু বার সম্পন্ন হয়। তাই এটি দ্বিনিষেক নামে পরিচিত। এর ফলে বীজে সস্য উৎপন্ন হয়।
দ্বিনিষেক:
পরাগরেণু ফুলের গর্ভমুন্ডে পড়ার পর তা গর্ভমুন্ড নিঃসৃত রস শোষন করে স্ফীত হয়। পরাগরেনুর রেণু-অন্তঃত্বক থেকে পরাগনালিকা উৎপন্ন হয়। পরাগনালিকার সম্মুখভাগে থাকে নালিকা নিউক্লিয়াস যার ক্রমাগত বিভাজনের ফলে পরাগনালিকা ডিম্বকের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এবং পশ্চাৎভাগে থাকে পুংজনন নিউক্লিয়াস। এই একই সময় ডিম্বকের ভ্রূনস্থলির নিউক্লিয়াস টি পরপর তিনবার বিভাজিত হয়ে মোট আটটি নিউক্লিয়াস তৈরী হয় এবং এই আটটি নিউক্লিয়াস থেকে আটটি কোশ সৃষ্টি হয় যার তিনটি ডিম্বক রন্ধ্রের দিকে অবস্থান করে, তিনটি রন্ধ্রের বিপরীত দিকে অবস্থান করে ও বাকি দু টি জোড় বদ্ধ ভাবে ডিপ্লয়েড নির্ণীত নিউক্লিয়াস (2n) তৈরী হয়। রন্ধ্রের দিকে থাকা কোষ গুলির বড়টি হল ডিম্বাণু ও দুটি হল সহায়ক কোশ। রন্ধ্রের বিপরীত দিকে থাকা তিনটি কোশ হল প্রতিপাদ কোষসমষ্টি। পরাগনালিকা ভ্রূনস্থলির নিকট অবস্থান করলে নালিকা নিউক্লিয়াসটি বিলুপ্ত হয় ও জনন নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে দুটি জনন কোশ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে একটি ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে ভ্রূণ তৈরী করে এবং অপরটি নির্ণীত নিক্লিয়াসের সাথে মিদিত হয়ে ট্রিপ্লয়েড সস্য নিউক্লিয়াস (3n) গঠিত হয়। এভাবে দুবার নিষেক প্রক্রিয়াকে বলে দ্বিনিষেক।
বীজ ও ফল গঠন:
নিষেক শেষ হলে ডিম্বাশয় ফলে ও ডিম্বক বীজে পরিনত হয়।
নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি:
ফল ধীরে ধীরে পরিনত হতে থাকে এবং শেষে কোনো প্রাকৃতিক কারনে ফল ঝরে পরে ও বহুদিন পর পচে গিয়ে বীজ বাহির হয়ে পড়ে ও সঠিক আলো, বাতাস, অনুকূল পরিবেশ পেলে বীজ প্রস্ফুটিত হয়ে নতুন চারাগাছ সৃষ্টি হয়।
সমাপ্তি হয় উদ্ভিদের যৌন জনন প্রক্রিয়া।